মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:মানিকগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলামের অত্যন্ত কাছের এবং চাঁদাবাজির সহযোগী মায়া খান। নিয়ন্ত্রণ রাখতেন অবৈধ লেগুনা। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হয়ে উঠেন আতঙ্কের নাম। লেগুনা থেকে মাসে আড়াই লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ ছিল তার নামে।
সদর উপজেলার মানরা গ্রামের তারা মিয়ার বাড়িতে ৩ দশক আগে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস শুরু করেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মায়া খানের স্বামী পেশায় কসাই। কসাই পেশায় সংসার চালাতে হিমশিম দেখা দিলে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে চুরি ছিনতাই করতেন মায়া খানের স্বামী সোনা মিয়া। এরপর মায়া খান স্বামীর ভরসা ছেড়ে দিয়ে নিজে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। এতে সখ্য গড়ে উঠে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তখন তাকে রাতারাতি পৌর আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান দেন জাহিদ। এরপর মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে লেগুনা গাড়ি থেকে চাঁদা তোলার দায়িত্ব পান মায়া খান।
প্রতিদিন মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে লেগুনা এবং ম্যাক্সি থেকে চাঁদা তোলা শুরু করেন। এই লেগুনা ম্যাক্সি থেকে মাসে ২ লাখ টাকা চাঁদা নিতেন মায়া খান। প্রতি লেগুনা থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা নিতেন তিনি। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন ৭০টি লেগুনা থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন তিনি।
তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের সঙ্গে সম্মিলিত ছবি শেয়ার দিয়ে তিনি সবসময় আলোচনায় থাকতেন। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গেও তার বেশ কিছু ছবি রয়েছে এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে রয়েছে তার ছবি। আর এই ছবি নিজের ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার দিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতেন।
মানিকগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলামের সহযোগী হিসেবে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আধিপত্য সৃষ্টি করেন এই মায়া খান। অবৈধ লেগুনা ম্যাক্সির চাঁদা ভাগবাটোয়ারা করতেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ এবং তার ভাই মাহিদ। মায়া খান ভয়ংকর হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে জাহিদ এবং মাহিদ। অবৈধ লেগুনা ম্যাক্সির মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেন জাহিদ।
আরও জানা গেছে গেছে, গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে কোমলমতি ছাত্রীদের ওপর হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেন এই মায়া খান এবং ৪ আগস্ট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ছাত্রদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করেন তিনি। এরপর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর মানিকগঞ্জ থেকে পালিয়ে যান মায়া খান। বর্তমানে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।
মানরা গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, মায়া খান প্রায় ৩৫ বছর আগে আমাদের এলাকায় তারা মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। উনার স্বামী মাঝে-মধ্যেই চুরি করে ধরা পড়েন। এরপর মায়া খান অনৈতিক কাজে জড়িত হন। এলাকায় মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন। সম্পর্ক হয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে। তিনি নিজেও ইয়াবা সেবন করতেন। এ ঘটনায় পূর্বে তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
মায়া খান আত্মগোপনে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।