আজ বুধবার রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে নারী মুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যু দিবসের তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। করোনাক্রান্তিকালের জন্য এবারে আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই পালিত হবে দিবসটি। তবে সংক্ষিপ্তভাবে ওই দিন বেলা ১২টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত আলোচনাসভা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে রোকেয়ার স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এতে উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসক আসিব আহসানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এদিকে পায়রাবন্দ ঘুরে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে রোকেয়ার জন্মভিটায় স্মৃতিকেন্দ্রটির ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করা হয়। স্মৃতিকেন্দ্রে রয়েছে একটি অফিস ভবন, সর্বাধুনিক গেস্ট হাউজ, মিলনায়তন, ডরমেটরি, গবেষণা কক্ষ, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গ্রন্থাগার, আবাসিক সুবিধাসহ বিশাল অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়। স্মৃতিকেন্দ্রের ভেতর মনোরম পুকুরপাড়ে তৈরি করা হয় বেগম রোকেয়ার একটি ভাস্কর্য। ২০০১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন।
জানা যায়, রংপুরের মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দের খোর্দমুরাদপুর গ্রামে মহিয়ষী নারী বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জহির উদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের। মা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী। ১৮৯৮ সালে ১৬ বছর বয়সে ভাগলপুর নিবাসী ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট খান বাহাদুর সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। ২৮ বছর বয়সে স্বামী হারান তিনি। ১৯১০ সালের শেষ দিকে তিনি কলকাতায় যান। অবরোধ বাসিনী, সুলতানার স্বপ্ন, অর্ধাঙ্গী, মতিচুর, চাষার দুক্ষু ছাড়াও অসংখ্য বই লিখে তিনি সারা বিশ্বে সমাদৃত হন। নারী জাগরণের এই পথিকৃত ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় মারা গেলে তাঁকে সোদপুরে সমাহিত করা হয়।
১৯৯৭ সালের ২৮ জুন তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বেগম রোকেয়ার স্মৃতি কেন্দ্র’র ভিত্তিপ্রস্তুর কাজের উদ্বোধন করে সেখানে একটি জলপাই গাছের চারা গাছ রোপণ করেন। গাছটি এর মধ্যে ডাল-পালা ছাড়িয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে গাছটিতে জলপাই ধরতে শুরু করেছে।
বর্তমানে পায়রাবন্দ ও বৈরাগীগঞ্জ এলাকায় বেসরকারিভাবে কর্মসংস্থানের জন্য গড়ে উঠেছে একাধিক ছোট ছোট কুঠির শিল্প, বীজ প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রসহ নানা প্রতিষ্ঠান। তবে বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের পাশে ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি মহাবিদ্যালয়’টিকে জাতীয়করণ করা হয়েছে। মানুষের এখন একটাই দাবি, অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রটি অতিদ্রুত পূর্ণাঙ্গরূপে চালু করা হোক।
বিগত বছরগুলোতে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করা হয় রোকেয়া দিবস। করোনা মহামারির কারণে এবার তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতা পালন হচ্ছে না।
বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এবারে তেমন কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি। শুধুমাত্র ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনাসভা হবে। ওই দিন সকালে বেগম রোকেয়ার স্মৃতিস্তম্ভের পাদদেশে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে বলে জানান তিনি।