ছয় বছরের মেয়েশিশুটিকে লেগুনায় করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সঙ্গে ছিল ১৪ বছরের এক কিশোরী। কিছুতেই থামছিল না শিশুটির কান্না। যাত্রীরা জানতে চাইলে শিশুটির মা পরিচয় দেয় ওই কিশোরী। এতে লেগুনায় থাকা রিয়াজ কবির নামের এক যাত্রীর সন্দেহ হয়। পরে লেগুনাটি পার্শ্ববর্তী থানায় নিয়ে যাওয়া হলে বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। মূলত শিশুটিকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের অক্সিজেন-২ নম্বর গেট সড়কের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় শিশুটির বাবার করা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন সাইফুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, ১৪ ও ১৬ বছর বয়সী দুই কিশোরী। পুলিশ বলছে, দুই কিশোরী মাদকাসক্ত। তারা মাদকের টাকার জন্য শিশুটিকে অপহরণ করে। তাদের পেছনে কারা আছে, শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
গত বুধবার বিকেলে জেলার হাটহাজারী থানার এগারোমাইল এলাকায় বাড়ির সামনে খেলতে থাকা ছয় বছরের শিশুটিকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে অপহরণ করে ১৪ বছরের ওই কিশোরী। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে এই ঘটনায় শিশুটির বাবা পেশায় সিএনজি অটোরিকশাচালক বাদী হয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। হাটহাজারী থেকে এনে শিশুটিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় ১৬ বছর বয়সী আরেক কিশোরীর বাসায় রাখে। সেখান থেকে গতকাল বিকেলে লেগুনায় করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল অন্য স্থানে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লেগুনাযাত্রী রিয়াজ কবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পাস করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি অক্সিজেন থেকে ছেড়ে আসা লেগুনাতে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে ওঠেন এক বন্ধুর বাসায় যাওয়ার জন্য। লেগুনাটি বায়েজিদ বোস্তামী মাজারে গেটে গেলে সেখান থেকে এক শিশুকে নিয়ে ওঠে আরেক যাত্রী। কিছু দূর যাওয়ার পর শিশুটি কান্না করতে থাকে। কারণ জানতে চাইলে মা পরিচয় দিয়ে কিশোরী বলে, পুতুলের জন্য। প্রশ্ন করায় বিরক্তির ছাপ চোখেমুখে ওই কিশোরীর। তখন যাত্রী রিয়াজ কবিরের সন্দেহ আরও বাড়তে থাকে। কারণ, শিশুটি ও মায়ের বয়সের হিসাব মেলাতে পারছেন না তিনি। সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা আরেক যাত্রীও শিশুটির কান্নার কৈফিয়ত চান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় মা পরিচয় দেওয়া ওই কিশোরী। একপর্যায়ে যাত্রী রিয়াজ কবির তাঁর মুঠোফোনে কল করে তাঁর বন্ধু মো. নোমানকে বায়েজিদ বোস্তামী থানার সামনে থাকতে বলেন। এতে আরও শঙ্কিত হয়ে যায় ওই কিশোরী। তখন রিয়াজ কবিরের সন্দেহ সঠিক মনে হয়। ইতিমধ্যে লেগুনার চালককে বলা হয় গাড়ি বায়েজিদ বোস্তামী থানায় নিয়ে যেতে। লেগুনায় থাকা আরও কয়েকজন যাত্রী বিষয়টি বুঝতে পেরে তাঁরা বায়েজিদ থানায় ঢোকার আগে নেমে যান। শিক্ষিকা ওই কিশোরীকে ধরে রাখেন, যাতে লেগুনা থেকে নামতে না পারে।
রিয়াজ কবির আরও বলেন, বায়েজিদ বোস্তামী থানায় যাওয়ার পর ওই কিশোরী সব ঘটনা খুলে বলে। শিশুটিকে অপহরণ করার কথা স্বীকার করে। একপর্যায়ে পুলিশ শিশুটির সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়, তাকে অপহরণ করা হয়েছে। তার বাড়ি হাটহাজারী। ইতিমধ্যে হাটহাজারী থানায় ফোন করা হলে সেখান থেকে পুলিশের একটি দল আসে। তারাও নিশ্চিত হয়, গত বুধবার নিখোঁজ হওয়া শিশুটি। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কিশোরীর সহযোগী ১৬ বছরের আরেক কিশোরী এবং সাইফুল ইসলাম (৩১) ও জাহাঙ্গীর আলম (৪০) নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে হাটহাজারী থানায় নিয়ে যায়।
শিশুটির বাবার করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাটহাজারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জালাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার চারজনকে শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের রিমান্ডে এনে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে শিশুটিকে কোথায় কার কাছে তুলে দিতে লেগুনায় করে নিয়ে যাচ্ছিল, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এলোমেলো তথ্য দিচ্ছে। দুই কিশোরীই মাদকাসক্ত।
শিশুটিকে ফিরে পেয়ে খুশি বাবা। আজ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘উঠানে খেলা করার সময় তাঁর মেয়েকে বেড়ানোর কথা বলে নিয়ে যায়। যাত্রী রিয়াজ কবির ও শিক্ষিকা সন্দেহ না করলে মেয়েকে ফিরে পেতাম না।’