কিন্তু তাদের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। নিজেদের যতটুকু আছে তা দিয়েই শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে বিনা মূল্যে খাবার বিতরণ শুরু করে তারা। অর্থের অভাবে কাজটা চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি তারা জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসানকে জানায়। জেলা প্রশাসক তাদের পাশে এসে দাঁড়ান। এতে বিনা মূল্যে খাবার বিতরণের কাজটি আরও বেগবান হয়।
২৩ এপ্রিল থেকে শৈশবের কর্মীরা শরীয়তপুর জেলা শহরে দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণের কাজ শুরু করে। জেলা প্রশাসনের দেওয়া চাল ও নগদ অর্থ দিয়ে রান্না করা খাবার প্যাকেট করে শ্রমজীবী মানুষের কাছে প্রতিদিন বিকেলে পৌঁছে দেয় শৈশবের শিশু-কিশোর স্বেচ্ছাসেবীরা।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে খাবার রান্না করা হয়। বাজার ও রান্না করা, প্যাকেট করা ও বিতরণের কাজ করে শৈশবের ২০ স্বেচ্ছাসেবী। জেলা শহরের পাশাপাশি ভেদরগঞ্জ উপজেলায় একই উদ্যোগ নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভির আল নাসিফ।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনদীপ ঘরাই প্রথম আলোকে বলেন,‘কিশোরদের উদ্যোগে শত শত মানুষের খাবার প্রস্তুত করা, তা বিতরণ করা এবং সেটা দীর্ঘদিন ধরে করা অনেক আনন্দ ও তৃপ্তি দেয়। রান্না করা খাবারের প্যাকেট হাতে পেয়ে কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষ যখন হাসি দেয়, তখন আমরাও আপ্লুত হই।’
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শৈশবের পক্ষ থেকে কর্মহীন মানুষদের বিনা মূল্যে খাবার দেওয়া হয়
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শৈশবের পক্ষ থেকে কর্মহীন মানুষদের বিনা মূল্যে খাবার দেওয়া হয়ছবি: সংগৃহীত
শৈশবের সমন্বয়ক ও সম্পাদক পারভেজ সাইম। সে স্থানীয় একটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। পারভেজ জানায়, তাদের সংগঠনের সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যুক্ত। করোনার কারণে লকডাউনে সাধারণ মানুষ অনেক কষ্টে থাকেন। তাদের দিনে অন্তত এক বেলা হলেও খাবার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাই তারা প্রথম দিকে স্বল্প পরিসরে কাজ শুরু করে। এরপর শরীয়তপুরের ডিসির সহায়তায় তারা পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছে।
শৈশবের কর্মী সাইফ রুদাত বলে, লকডাউনে শ্রমজীবী মানুষ অনেক কষ্টে আছেন। খাবার পেয়ে একটু হলেও স্বস্তি পাচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ। এমন একটি কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে সে আনন্দিত।
জেলা প্রসাশক মো. পারভেজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, করোনাকালে শ্রমজীবী মানুষ কষ্টে আছেন। তাঁদের জন্য কিছু করা প্রয়োজন, এমন উপলব্ধি শিশু-কিশোরদের মনে এসেছে, এতে তিনি অভিভূত। তারা দিনের পর দিন পরিশ্রম করে খাবার প্রস্তুত করছে, আবার তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুধু তাদের পাশে থাকছি, অর্থ দিয়ে সহায়তা করছি। যত দিন করোনার প্রাদুর্ভাবে মানুষ কষ্টে থাকবে, তত দিন এ কার্যক্রম চলতে থাকবে।’